সর্বশেষ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চায় না জাপাসহ কয়েকটি দল

প্রকাশ :


২৪খবর বিডি: 'আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং জাতীয় পার্টি-জেপিসহ কয়েকটি দল। তবে সংসদের কিছু আসন অথবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে এসব দল।'

-গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইভিএম যাচাইয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে দলগুলো নিজেদের এমন অবস্থানের কথা জানায়। বৈঠক শেষে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, সকালে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচন ব্যবস্থা এখন যেমন আছে, সেটার পক্ষেই তাঁরা। ইভিএম ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। বৈঠকে ইসির কাছেও এ মতামতই তাঁরা তুলে ধরেছেন।

'জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, আপাতত জাতীয় নির্বাচন ইভিএমে ব্যবহারের পক্ষে নন তাঁরা। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে আস্থা অর্জনের পর এটি পরবর্তী সময়ে বৃহৎ পরিসরে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকে অহেতুক ইভিএম ইস্যুতে বিতর্কে না জড়াতে পরামর্শ দেন তিনি।'

'বৈঠকের স্বাগত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ইভিএম নিয়ে ঐকমত্য তৈরির অবস্থা নেই বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিছুদিন আগেও ইসি ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করেছে। তারপরও রাজনৈতিক মহল এবং পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ইসি জানতে পেরেছে, ইভিএম নিয়ে ঐকমত্য নেই। এমন পরিস্থিতিতেই সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে।'

-তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে গণমাধ্যমে। আমরা সবাইকে জানিয়েছি, ইভিএম নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু যেহেতু নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে, সেহেতু ইসিকেও ধারণা নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত স্বাধীন হবে বলেই ইসি বিশ্বাস করে।

'ইভিএম যাচাই করার জন্য নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকেই ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার জন্য ডেকেছে ইসি। তিন দিনের বৈঠকের প্রথম দিন গতকাল রোববার মতবিনিময় বৈঠকে যে ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে- জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় পার্টি-জেপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস। এগুলোর মধ্যে আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বৈঠকে আসেনি।'

-বৈঠকে ইভিএম নিয়ে মানুষের প্রস্তুতি নেই উল্লেখ করে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলক ইভিএম ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু সারাদেশে ৩০০ আসনে ইভিএমে হলে এটা হ্যাপাজার্ড হয়ে যাবে। ইভিএমে ভোট দেওয়ার মতো প্রস্তুতি মানুষের নেই। মানুষ ভোট দিতে চায়। কিন্তু মেশিনের বিষয়ে আমাদের 'রং' একটা ধারণা। দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই, আগামী নির্বাচন ইভিএমে হোক, তা আমরা চাই না।

তিনি বলেন, মেশিনের দোষের চেয়ে বড় দোষ বাংলাদেশের মানুষের। ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয় বলেই জাতীয় পার্টি মনে করে।

-জাপা মহাসচিব বলেন, 'আটটা নির্বাচন করেছি। মানুষের ইভিএম সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে আমি একটি কথাই বলব- ইভিএমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলে না, অনেক বিষয় রয়েছে। ইভিএমে আস্থা না দেখানোর কোনো কারণ নেই। কিন্তু ইভিএম নিয়ে এরই মধ্যে একটা পাবলিক পারসেপশন- ইভিএম মানে অন্য কোনো কারসাজি রয়েছে।'

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চায় না জাপাসহ কয়েকটি দল

'সিইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, 'নির্বাচন করব আমি, আমরা। আপনার দায়িত্ব কতটুকু নির্বাচন সুষ্ঠু করা যায়, ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেন। তারা বেশিরভাগ যা বলে তা জনগণের প্রতিফলন হতে পারে।'

'বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, 'ইভিএম যেহেতু আমরা ব্যবহার করছি, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- এটার সম্পর্কে আপনাদের (রাজনৈতিক দল) ধারণা দেওয়া। কিন্তু আপনাদের মতামত কী হবে, সেটা হবে আপনাদের স্বাধীন মতামত। আমরা কোনো মতামত কারও ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না। চাপিয়ে দেবও না, সে ধরনের কোনো ইচ্ছাও আমাদের নেই।'

-কোনো দলের কোনো প্রশ্ন থাকলে ইসির বিশেষজ্ঞরা তার জবাব দেবেন বলে জানান সিইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, 'আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে সেগুলো উপস্থাপন করবেন। আমাদের যাঁরা ইভিএম সম্পর্কে বোঝেন, তাঁরা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমাদের আজকের আলোচনা ইভিএমের মধ্যেই সীমিত থাকবে। আমরা আজ অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইব না। সেটার সুযোগ আপনারা আরও পাবেন।'

-দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও ইভিএম বিষয়ে নানা মত ও প্রস্তাব তুলে ধরে। বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, ইভিএমের ব্যাপারে অনেকের বক্তব্য ইতিবাচক। আবার অনেকে বলেছেন, ইভিএম ব্যবহার করা সমীচীন হবে না। কিন্তু ইভিএমের অনেক বিষয় তাঁদের অজানা ছিল, সেখানে বিশেষজ্ঞরা বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলেছেন।

'আরও দুটি ধাপে মতামত নিয়ে পরে পর্যালোচনা করা হবে জানিয়ে দলগুলোকে ইভিএম নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষারও অনুরোধও জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আপনাদের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করাতে পারেন। আমরা স্বচ্ছ থাকতে চাই। এখানে জটিলতা আছে, নাকি দুর্নীতি ও অসততা আছে, সেটা আজও আপনারা দেখেন। পরেও এসে দেখতে পারেন।''

'রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আরও ১৩ দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।'

 

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত